অঞ্জন দত্ত, জন্ম: জানুয়ারি ১৯, ১৯৫৩, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। আরো জানতে
এই ব্লগটা অঞ্জনের গান প্রেমীদের জন্য। আমার হাতে এখন অফুরন্ত সময়, অঞ্জনের গান শুনছি, ভাবলাম লিখে রাখি, পড়া যাবে কিন্তু তাও হচ্ছেনা। পায়ের সাথে চোখের সমস্যায়ও ভুগছি। শুনে শুনে লেখা তাই ভুল থাকবেই, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কেউ গান গায় (১৯৯৭) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কেউ গান গায় (১৯৯৭) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অদ্ভুত ভালো লোকটা

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা
তার অনেক কিছু দেখা চোখটা
স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তা স্বপ্ন সত্যি হয়
সে কি কিছুটা তোমার আর কিছুটা আমার মতো নয়
কিছুটা তোমার সে কি, কিছুটা আমার মতো নয়

চারমিনারের সৌজন্যে শুরু করে সে তার সকাল
দিনের শেষে, ঘুমের দেশে ঘুরে আসে চিরকাল
নেই তার কোন জুড়ি, গাড়ি আছে শুধু ঐ বিজ্জ বিশাল
কোন দলে নাম নেই তবু দলাদলি করে কেটে গেল সবসময়

অফিসে গিয়ে আগে কলারে রুমাল আর এক গ্লাস জল
কাজে নেই মন তার ক্রিকেটের চিন্তায় জিতে কোন দল
বামপন্থি গান শুনলে পরে করে চোখ ছলছল
লক্ষী বারে দাদায় উপোস করে, পরে হ্যাংলা জিন্স বিজয়ায়

ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই
বোতাম ছেড়া শার্ট নিয়ে সুদুর গায়
তিস্তা নদীর ধার ধরে সোজা হিমালয়
স্বপ্ন দেখে সে যদি কোনদিন তার স্বপ্ন সত্যি হয়


অ্যালবাম: কেউ গান গায়

ফিরে আসবো

ফেলে আপোসের স্বভাবটা ফিরে আসবো
ফেলে জিবের এই বিস্বাদটা ফিরে আসবো
ফেলে দশটা আর পাঁচটা ফিরে আসবো
ফেলে এক রুটের বাসটা ফিরে আসবো
ফেলে মিথ্যে কথার ক্লাসটা ফিরে আসবো
ফেলে হলদে সিলেবাসটা ফিরে আসবো
ফেলে পিছিয়ে পড়া মনটা ফিরে আসবো
ফেলে বয়েসের বারনটা ফিরে আসবো
ফেলে রোজকার বাজেট খরচা ফিরে আসবো
ফেলে নিন্দে পরচর্চা ফিরে আসবো
ফিরে আসবো তুমি কেঁদোনা
ফেলে আপোসের চাপা বেদনা
সবাই এখানে আবার  আসবো
ফিরে আসবো, ফিরে আসবো, ফিরে আসবো

ফেলে পঁচা এঁদো গলিটা ফিরে আসবো
ফেলে ফুটো বাজারের তলিটা ফিরে আসবো
ফেলে কবরে খবরটা ফিরে আসবো
ফেলে কাগজের টোপরটা ফিরে আসবো
ফেলে সেলুনের কাঁছিটা ফিরে আসবো
ফেলে সর্দি কাশি হাঁচিটা ফিরে আসবো
ফেলে মতবাদের রঙটা ফিরে আসবো
ফেলে ধর্মের অংবংটা ফিরে আসবো
ভুলে হেরে যাওয়ার জ্বালাটা ফিরে আসবো
খুলে মনের জানালাটা আবার আসবো

নিয়ে আকাশের নীল গন্ধ ফিরে আসবো
নিয়ে হাজার প্রশ্ন দ্বন্দ্ব ফিরে আসবো
নিয়ে ছেলেবেলার সুখটা ফিরে আসবো
সেই মেঘলা দুপুরটা নিয়ে আসবো
নিয়ে পাগলা ক্ষ্যাপা মনটা ফিরে আসবো
সেই বাউলের গানটা নিয়ে আসবো
নিয়ে সহজ সরল ভাষাটা ফিরে আসবো
সব বদলে দেবার নেশাটা নিয়ে আসবো
ভাল লাগছে নিজেকে আবার ভালবাসবো
আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো

অ্যালবাম: কেউ গান গায়

কেউ গান গায়

কেউ গান গায়, কেউ গান শুনে, এটা একটা
কথায় সুরে কাছে আসার চেষ্টা
মাঝখানে আছে লেনদেন, আছে পয়সা
এটা কাছে আসার ভালবাসার ব্যবসা

কেউ বই লিখে, কেউ বই পড়ে, কেউ পড়েনা
কেউ পড়তে বসলে একটুও নড়েচড়েনা
কেউ পড়াতে পড়াতে নিজেই পড়তে পারেনা
আমি চিনি এমন অনেক যারা অ আ ক খ হ ই কী জানেনা

তুমি নাটক সিনেমা বইমেলা চষে যাচ্ছো
তোমার মনের মাথার খিদেটা মেটাচ্ছো
কেউ খায়াচ্ছে আর তুমি প্রান ভরে খাচ্ছো
তোমার খেওকির বংশটা বাড়াচ্ছো

কেউ বেশি খায়, কারো খিদে পায়না
কেউ সস্তার কোন কিছুই খেতে চায়না
কেউ অনেক খেয়ে করছে খাওয়ার বায়না
আমি চিনি এমন অনেক যারা সারাদিনে কিছুই খেতে পায়না

আমি গান লিখি, আমি গান গাই, এটা রোজগার
কেউ টিকিট কাটে আমার গানের জলসার
কারো গান দামী, কারো গান খুব সস্তা
কেউ বেচতে চায়না কোনদিন গানটা

কেউ আলতা বেচে, কেউ বেচে আয়না
কেউ সহজে কোন কিছুই বেচতে চায়না
কেউ বেচার মতো কিছুই খুজে পায়না
আমি চিনি এমন অনেক যাদের এসব কোন কিছুই আসে যায়না



অ্যালবাম: কেউ গান গায়

বয়স আমার বারো তাই

বয়স আমার বারো তাই
রোজ দুটো টাকা পাই
একা রাস্তায় হাটতে পারি
বাড়ি স্কুল আবার বাড়ি

বাসে বড্ড ভীর মশাই
হাটতে হচ্ছে আমায় তাই
বেঁচে যাচ্ছে বাসের ভাড়া
টিফিন টাইমে ঝাল পেয়ারা

যাচ্ছি একটু পার্কটা ঘুরে
পেঠ কাটিটা যাচ্ছে পুড়ে
দে তো একবার তোর লাটাই টা
তেড়ে যাবো কাঠটা

আরো দুটো লেম্পোস্ট বাকি
এবার ঘন্টা পড়বে নাকি
একটু জিরিয়ে নিই
পাচ্ছে হিসি করবো কী

সূর্যটা আজ সকাল থেকে
দিচ্ছে বেগড়া থেকে থেকে
যাচ্ছে সব আমার গুলিয়ে
অংকের খাতা এসেছি ফেলে
তবু যেতে হচ্ছে স্কুলে



অ্যালবাম: কেউ গান গায়

নিয়ে যা নিয়ে যা

নিয়ে যা নিয়ে যা,  ভাসিয়ে নিয়ে যা আমায়
নতুন দিনের নতুন ভাষায়
দিয়ে যা, দিয়ে যা, আরো একটা নতুন গান আমার এ পুরনো কলকাতায়

পঁচা ফুলের গন্ধে ভরে গেছে এ বাসর
মিথ্যে কথার রঙ মেখে সং সাঁজারে আসর
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আমার সকাল সন্ধ্যে মনের ভেতর
নিজের কাছে নিজেই নিরুপায়
ফেলে রেখে পিছুটানের মায়া, গুন ধরা চৌকাঠ
ভুলো গিয়ে শুধু ভুলে ভরা ব্যথার বাজার হাট
ভুলতে আমি রাজি আমার বোতামবিহিন শার্ট
একটা নতুন গানের ইশারায়

হাতটা বুকে রেখে বলো ভালো আছো কী
ভালো থাকার জন্য কত নানান চালাকি
খারাপ ভালো এলোমেলো করিয়ে দিয়ে যাওয়ার মতো
একটা নতুন গান আমার চাই
নেই যে আর এখানে কিছুই হারাবার আমার
বস্তা পঁচা রাগ রাগিনীর সস্তা এ বাজার
একটা ক্ষ্যাপা মন মাত্র ছ'টা তার
পারে কেবল বাঁচাতে আমায়



অ্যালবাম: কেউ গান গায়

কাঞ্চন জংঘা

একটু ভালো করে বাঁচবো বলে আর একটু বেশি রোজগার 
ছাড়লাম ঘর আমি ছাড়লাম ভালোবাসা আমার নীলচে পাহাড়।
পারলোনা কিছুতেই তোমার কলকাতা আমাকে ভুলিয়ে দিতে 
পাহাড়ী রাস্তার ধারের বস্তির আমার কাঞ্চনকে;
কাঞ্চন জানা, কাঞ্চন ঘর 
কাঞ্চন জংঘা , কাঞ্চন মন  
তো পাইলে সোনা হনু বইয়্যো,ম উল্লা ভাংচু কাঞ্চন ।

মিসেস মূখার্জী

সাবধান মিসেস মূখার্জী একটু ভেবে দেখবেন
মেয়েটি যে আপনার হচ্ছে বড়, সে তো নয় ফাউন্টেন পেন,
আগলে আগলে রেখে আঁচলের তলায়-
ধরে রাখা যায়না সময়;
চোখে চোখে রাখা মানে কিন্তু মনে ধরে রাখা নয়।
সাবধান মিসেস মুখার্জী তাকিয়ে দেখুন একবার
বলতে কি চায় চোখ দুটো তার চাপা অহংকার,
জামার মাপটা তার জানেন ভালোই
মনের খবর কি রাখেন ?
সাবধান মিসেস মুখার্জী সাবধান মিসেস সেন।
বড় হয়ে যাচ্ছে মন
বড় বড় স্বপ্ন সে দেখতে শিখছে এখন
পৃথিবীটা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে
মানবে কি করে সে বলুন
আপনার ছোট খাটো শাসন।

মিস্টার হল



কানে বাঁজে এখনো পুরানো সে পিয়ানোর ঝংকার
নিকোটিনে হলদে হয়ে যাওয়া দশটা আঙুল
সারি বেধে দাড়িয়ে একশো মাইলের গানটা
একশোবার শুনেও একশোবার হতো ভুল।
জানালার বাইরে কুয়াশায় সাদা ইস্কুলটা
পকেটের ভেতরে আধ-খাওয়া পাহাড়ি ফল
হাত পেতে বেত খেতে হয়েছে তোমার কাছে কতবার
আমার গানের শুরু মি. হল।

ববডিলানের গান

আমি চাইনা তোমার সাথে লড়তে
চাইনা তোমার মাথায় উঠে চড়তে
চাইনা তোমাকে ভাঙতে কিংবা গড়তে
চাইনা তোমাকে করতে ব্যবহার
চাইনা তোমাকে পড়াতে কিংবা খেলতে
চাইনা তোমাকে পাড়তে কিংবা ফেলতে
নেভাতে কিংবা জ্বালতে কিংবা পুষতে কিংবা পালতে
একটা বন্ধু হবে কী বলো তুমি আমার
শুধু বন্ধু হবে কী বলো তুমি আমার
একটা বন্ধু হতে কী পারবে তুমি আমার

চ্যাপ্টা গোলাপ

স্কুলের গেটের বাইরে দাড়িয়ে মেয়েটা
ছেলেটা দৌড়ে দৌড়ে এসে হাঁপায়
স্কুলের বাসটা হর্ণ  দিয়ে যায় তিনবার
মেয়েটা দৌড়ে দৌড়ে চলে যায়
স্কুলের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছেলেটা
হাপাতে হাপাতে আবার হাটা দেয়
বাসের ভেতর জানলার কাছে ঝাপসা
মেয়েটার আবার কান্না পায়
আরো দুটো ছেলে মেয়ের বয়েস বেড়ে যাবে
আরো দুটো দিনের অবসান
আমার ছেলে মানুষিটা আঁকড়ে ধরে রেখে
লিখবো আমি ভালবাসার গান