অঞ্জন দত্ত, জন্ম: জানুয়ারি ১৯, ১৯৫৩, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। আরো জানতে
এই ব্লগটা অঞ্জনের গান প্রেমীদের জন্য। আমার হাতে এখন অফুরন্ত সময়, অঞ্জনের গান শুনছি, ভাবলাম লিখে রাখি, পড়া যাবে কিন্তু তাও হচ্ছেনা। পায়ের সাথে চোখের সমস্যায়ও ভুগছি। শুনে শুনে লেখা তাই ভুল থাকবেই, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ক্ষ্যাপার শহর

বয়স বাড়ছে, টাক পড়ছে, চোখে চালসে, পেটে চর্বি। মনের ভিতর একটা অশান্তি আর জ্বিবের তলায় সর্বক্ষণ একটা তেতু স্বাদ। আমার এ শহর থেকে আমার যাবতীয় গান কিন্তু বয়সের সঙ্গে আমার শহরও পাল্টেছে। অন্তত আমার কাছে। তাই আমার গানের বয়সও হয়তো বাড়ছে।

মেঘ জমেছে আবার আকাশে
ভিড় জমেছে ফুটপাথের ধারে
ডাকছে আবার নিয়ন আলো তোমাকে আমাকে
সন্ধ্যে নামছে ক্ষ্যাপার শহরে
ভুলতে চাইছে শ্যামলেন্দু হেরে যাওয়ার জ্বালা
মাত্র দেড়শ টাকা বাড়লো ইনক্রিমন্ট
ভুলতে চাইছে মাধবী তার শুভদৃষ্টির মালা
কিন্তু চাকরি হচ্ছেনা যে পার্মানেন্ট
ভুলতে চাইছে সকলেই সকলের যন্ত্রণা
কত স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে বেহাল
কিছুক্ষণের জন্য তাই আসছে এ শহরে
ভুলে থাকার একটা ক্ষ্যাপা রাত
ভুলে ভরা ভুল ভুলাইয়্যা অলিতে গলিতে
বাড়ছে ভুলে থাকার বাজার দর
ভুলে ভরা জীবনগুলো বুকে করে নিয়ে
চলছে আমার ক্ষ্যাপাটে শহর

চাইছে কিনতে মনটা, মোবাইল টেলিফোনটা
কিন্তু পকেট বড়ই, বড়ই কমজুরি
তাই কিনে ফেলতে হলো, কিছু কিনতে হবে বলে
ফুটপাথের প্লাষ্টিকের ঘড়ি;
যতই সন্ধ্যে বাড়ে, এই ভুলে থাকার নেশাটাকে
দমিয়ে রাখা বড় মুশকিল
তাই কিনে ফেলল শশী, একটা লাল রঙের শিশি
নয়নী কান নতুন হাই হিল
কিনছে, সবাই কিনছে, কী কিনছে জানেনা
কিনছে গোটা ধর্মতলার মোড়
এই কেনাকাটির ঠেলায় ভুলে থাকছি মনের জ্বালা
হেরে যাওয়া ক্ষ্যাপাটে শহর
একটু নেশা, বেসামাল কথা, জড়িয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফেরার পাট
তাই কিনে ফেলল সোমনাথ নেশার অজুহাতে এই ক্ষ্যাপা শহরের রাস্তাঘাট


মেঘ জমেছে আবার আকাশে
ভিড় জমেছে ফুটপাথের ধারে
ডাকছে আবার নিয়ন আলো তোমাকে আমাকে
সন্ধ্যে নামছে ক্ষ্যাপা শহরে
ভুলতে চাইছে ধর্মতলা, একাত্তের জ্বালা
ভুলতে চাইছে কত ভাঙা ঘর
ভুলতে পারছে না যে কত নোনা ধরা দেয়াল
সে দিনের সেই ক্ষ্যাপাটে শহর
ভুলতে চাইতে সকলেই সকলের যন্ত্রণা
কত স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে যে বেহাল
তাই কিছুক্ষণের জন্য নেমে আসছে এ শহরে
ভুলে থাকার একটা ক্ষ্যাপা রাত



অ্যালবামঃ অসময়

ছোটদের ছোট্ট গান

চোখ দুটো দেখছে কী সত্যি
নাকী সব খবরের কাগজ
মন থেকে বলছি কী কথাটা
আমরা সবাই রোজ রোজ,
শেষ কবে কান্নাটা কাঁদলে
পড়ছে কী মনে, নাকী ভুলেছ
ফুল পাখি গাছ পালা বৃষ্টি
শেষ কবে এইসব ভেবেছ;
অন্যের জন্যে কী কষ্টে
দুঃখটা রাগ হয়ে যায়
মন থেকে কোন কিছু দিয়ে দিতে
করছে কি আজ কাল ভয়, ভয়,
ভালবাস মানে একটি বাসা কী
ঘরে ফিরে আসা মানে আসা কী
বিশ্বাসে বিশ্বাস আছে তো
চলছি, না ভেসে ভেসে যাচ্ছি




অ্যালবামঃ অসময়

নীল

নীল মানে ফেলে আসা সকলের আকাশের একটা নাম
নীল মানে ভালবাসার গভীরে লুকনো একটা রঙ,
নীল একটা চেনা চেনা কবেকার নীলিমার অন্য নাম
নীল একটা নাম

লাল একটা মোজা পরে ছেলেটা রেলিঙে দুলে যায়
লাল মানে ছেলেবেলার সূর্যটা ড্রয়িংয়ের খাতায়
লাল আজকে আমার কাছে রাজনীতি,
বড় হয়ে গেছি যে হায়, কী করা যায়

সবুজ মানে গাছের পাতা বেড়ে যায়, সবুজের স্বভাব
গাছ পোতা হয়নি বলে শহরে, সবুজের অভাব
সবুজ রঙের মনটা ছিল আমারও, কী যে হলো, কোথায়, কোথায়

ভয় মানে কালো কালো ছায়াটা দেয়ালে রাত্রিরে
চোখটা বুঝে ফেলতে হবে নইলে ভয়, নইলে ভয় যাবে বেড়ে
ভয় একটা ছিল যে ছেলবেলা, মিথ্যে বলা গেছে আজ হারিয়ে

হাসি মানে মজা পেলে হাসতে চাও, হেসে যাও আজীবন
একটু হাসির জন্য আমি কাঁদি আজ, হাসতে চাই তোমার মতন
একটু হাসবো তোমার সাথে বলে তাই,
আমি লিখে যাই একটা গান, আর একটা গান


নীল মানে ফেলে আসা সকলের আকাশের অন্য নাম
নীল মানে ভালবাসার গভীরে লুকনো একটা রঙ,
নীল একটা চেনা চেনা মুখ আমার, বাঁজায় গীটার, হরদম,


নীল একটা নাম



অ্যালবামঃ অসময়

অসময়

সেই মন প্রাণ খুলে গল্প করার দিন শেষ 
শুধু তাড়াহুড়ো করে যদি কিছু কথা বলে ফেলা যায়, 
সময় যা ছিল হাতে সবটাই নিঃশেষ 
পড়ে আছে শুধুই অজস্র অসময়। 
তাই হলদে পাখীরা এই শহরে আর ফিরে আসেনা 
শুধু বেড়ে চলে ডিজেলের ধোঁয়া রাস্তায়,
সেই ন্যাংটা ছেলের দল ফুটপাত ঘিরে আর হাসেনা 
বেড়ে গ্যাছে রাতারাতি বয়স, অসময়। 
তাই বৃষ্টি নামলে পরে মন আর জুড়িয়ে যায়না
শুধু চ্যাপছয়াপে কাঁদা আর প্যাঁচপ্যাঁচে সংশয়, 
কারও মুখে আর কোন মিষ্টি হাসি মানায়ানা
তেতো হয়ে গ্যাছে সব হঠাৎ, অসময়। 
তাই কোনদিন যদি একা একা একা জানলার পাশে 
কোন খয়েরী বিকেলবেলা কান্না পেয়ে যায়, 
নিয়ে কথার ছলে শ্যাওলায় ভেজা গানটা আমার
ফিরে আসব তোমার কাছে হঠাৎ অসময়। 

আজ বৃষ্টি নামবে বলে বেড়ে গ্যাছে তাড়াহুড়ো সকলের 
ভাসবেনা নীল কাগজের নৌকো নালায়,
আজ তাড়াহুড়ো করে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ
ভেসে যাবে শরীর,আবার অসময়.।
তাই স্যাঁতস্যাঁতে সকলের ঘরদোর, চৌকাঠ 
রোদের রং শুধু বদলায় আকাশের গায় 
মনের ভেতর সব হয়ে গ্যাছে অকারণ ফ্যাকাশে, 
বিস্বাদে ভরা চোখ দেখে যায়, অসময়। 

তাই হলদে পাখীরা এই শহরে আর ফিরে আসেনা, 
শুধু বেড়ে চলে ডিজেলের ধোঁয়া রাস্তায়। 
সেই ন্যাংটা ছেলের দল ফুটপাত ঘিরে আর হাসেনা 
বেড়ে গ্যাছে রাতারাতি বয়স,অসময়। 
তাই কোনদিন যদি একা একা একা জানলার পাশে 
কোন খয়েরী বিকেলবেলা কান্না পেয়ে যায়, 
কথার ছলে এই গানটা তোমার কাছে 
নিয়ে আসব ফিরে হঠাৎ অসময়। 
আমি আসব ফিরে হঠাৎ অসময় 
আমি আসব ফিরে সময় অসময় 
নিয়ে আসব ফিরে হঠাৎ অসময়.... 



অ্যালবামঃ অসময়

Happy Birthday

এই গানটাও শুরু হয়েছিল একটা চিঠি দিয়ে, অ্যামেরিকার ম্যানহাটন শহরে একটা বারে বসে লেখা ইংরেজীতে। খুবই ব্যক্তিগত চিঠি। আমার সব অ্যালবামে দশ কিংবা এগারোটা করে গান থাকে, এবারেরটা রেকর্ড করতে গিয়ে দেখলাম, গান শর্ট পড়ছে। মাত্র আটটা, তাই ইংরেজী চিঠিটা জুড়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস আপনারা যারা আমার গান শুনেন, বাংলা গানের অ্যালবামে ইংরেজী গান শুনে রেগে যাবেন না।

Chhonda I am writing this letter to you
from a manhattan pub and its twelve fifty two..
They've switched off the music and they're washing the glass,
got to return back to my hotel..
There's so many things that i want to say,
now that i 've come so far way..
All the wrong things i've done and all the wrong things i've said
what u mean to me today.
And i want to ask you how things are at home,
whether u miss me, what u cooked yesterday..
but this napkins is too small to fit in all that
and they have shut down the mall..

Outside the broadway it's cold and its blue
and my pocket is bury as the soles of my shoe..
I wish I could stay  here and talk about you
to the old man behind the bar..
I wish i could tell you what this day means to me,
wish i could write a fancy poetry,
but all I've written in the past half an hour
is a little "happy birthday to you".

I am sorry to be such awefull old man
I wish I could make u understand
but since I am so far, so far away from you
well a little "happy birthday to you"!


ছন্দা এই চিঠিটা লিখছি তোমায়,
একটা ম্যানহাটন বার থেকে রাত বারোটায়..
ওরা নিভিয়ে দিচ্ছে আলো, ধুয়ে ফেলছে গেলাস,
আবার সেই সস্তার হোটেল
আজ অনেক কিছুই বলতে চাইছি তোমায়,
বসে এই সুদূর আমেরিকায়,
রোজকার সেই একঘেয়ে মিথ্যে কথা নয়,
মনের ভেতর থেকে
ইচ্ছে করছে জানতে কাঁদছে কি মন?
কি করছে আমার কলকাতা এখন
কিন্তু ন্যাপকিনটা বড়ই ছোট ভেতরটা নীল,
আর পেন এর কালি ফুরিয়ে গেছে..
বাইরে ব্রডওয়ে ধোয়াশায় ভেজা,
ভেজা আমার ছেড়া জুতার শুকতলাটা,
আর পকেটেও মাত্র ডলার ছ'টা,
শেষ হুইস্কিটাও ফুরিয়ে গেছে..
আমি জানি আমি লোকটা সুবিধের নই,
সব ছেড়েছুড়ে বেড়াই ঘুরে বিদেশ-বিভূঁই..
তবু ন্যাপকিনটা আজ আমি পোস্ট করবই
নেশা কেটে যাওয়ার আগে..
ইচ্ছে ছিল লেখার তোমায় অনেক কথা
বড়সড় মানেওয়ালা কবিতা..
কিন্তু ঘন্টাখানেক ধরে শুধু একটাই কথা লিখেছি -
Happy Birthday to you........




অ্যালবামঃ অসময়

চোখের জল কিংবা পানি

বাংলাদেশে অনুষ্টান করতে যাই, ফিরে এসে সেই ছোট্ট প্রাণবন্ত দেশটাকে নিয়ে কিছু গান লিখি, আমার বাংলাদেশের শ্রোতাদের জন্য। তার মধ্যে এই গানটা মনে হয় আমার এই বাংলার কিছু মানুষের হয়তো খারাপ লাগবেনা।

বেইলী রোডের ধারে, আমি দেখেছি তোমায়
রাতের অন্ধকারে, আমি দেখেছি তোমায়
আমার বউ বাজারে,আমি দেখেছি তোমায়
দু’দিকের কাঁটা তারে আমি দেখেছি তোমায়
এখানে তুমি হাসি মল্লিক,ওখানে হাসিনা
এখানে তোমার দাম পঞ্চাশ, ওখানে কত জানিনা
নিয়ন আলোয় ঝলসে যাওয়া দুটো শহরের রাত
বেঁচে থাকার জন্য কেনা বেচার দুটো হাত
ডলারের হার কমলে, তাদের দর বদলায়
চোখের জল কিংবা পানি, সেতো নোনতাই থেকে যায়।

কারো খদ্দের টয়োটা চড়ে, কারোর মারুতি জেন
কারো চোখে দিশি নেশা, কারোর ফরেন
তবু চাহিদা সেতো একটাই, একটুখানি সুখ
তাই একই ভাবে লাঞ্ছিত হয় দুটি দেশের মুখ
তবু আবার সকাল আসে, ওরা স্নান করে যায়
দুজনেই মনে মনে, বাংলায় গান গায়।
ডলারের হার কমলে, তাদের দর বদলায়
চোখের জল কিংবা পানি, সেতো নোনতাই থেকে যায়।

এখানে ঘোলাটে গঙ্গার জল, ওখানে ইছামতি
নোংরা নষ্ট, হাজার কষ্ট তবু বয়ে চলে ঠিকই
চেপে রাখা ক্ষত, যত যত হাহাকার
বিশ্বের কাছে দেনার দায়ে লাঞ্ছিত বারবার
তবু আবার রঙ চাপিয়ে, দাঁড়াতেই হয়
বেঁচে থাকার জন্য, বিশ্বের রাস্তায়।
ডলারের হার কমলে, দেশের দর বদলায়
চোখের জল কিংবা পানি, সেতো নোনতাই থেকে যায়।



অ্যালবামঃ অসময়

দার্জিলিং ২

কুয়াশায় ঘেরা ভাসা ভাসা সেই পাইন গাছের ফাঁকে ফাঁকে রোদ্দুর
খাদের ধারে শুয়ে শুয়ে হাতে পায় হলদে সবুজ রং
ছিলনা বালাই সময়ের শুধু  আকাশে একটা নেপালী গানের সুর
আমার পাহাড়ি ছেলেবেলার একটা গান

সূর্যের গন্ধটা নিয়ে পকেটে আমার কেটে গেছে কত রাত
হাতের মুঠোয় শিশির ভেঁজা গোটা দার্জিলিং কেলিম্পং
আমার সাহেবি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সেই চ্যাপ্টা ভালবাসা
আমার পাহাড়ি ছেলেবেলার একটা গান

আজ সূর্যটা গেছে হারিয়ে আমার পকেট থেকে, কে জানে কোথায়
কুড়িয়ে পাওয়া নুড়ি পাথর পাহাড়ি ফুল গেছে শুকিয়ে
খুঁজে ফিরি শুধু হাততালি এই সাদাকালো শহরের জলসায়
সেই চ্যাপ্টা ভালবাসা গেছে ফুরিয়ে

হয়তো নেপালী ছেলেটা এখনো সেই পাহাড়ের গায়ে গীটার বাঁজায়
আমার ছুটুর ফাঁকে খুঁজে ফিরি তার চোখের হলদে সবুজ রং
কোথায়, কোথায়, কোথায় আমার মুঠোর ভেতর আমার দার্জিলিং
শুধু গানেই থেকে গেছে আমার পাহাড়ি গান



অ্যালবামঃ অসময়

চালসে

কে খালি পেটে কখন শুতে যায় তার খবর রাখিনা আর
কে কার ঘর কী দিয়ে সাঁজায় আমার খবর শনিবার
সব যাপসা হয়ে যায় যখন তখন, এটা কী সত্যি চালসে
না কী দেখছেনা চোখ আমার তেমন করে আর, হয় গেছে চোখ দুটো আলসে

রাজনীতি হয়ে গেছে নোংরামি তাই, নই ভিখ আমি আর নই
অস্তিত্ব জানান দেয় আমার মোবাইল, আমি আশ্বস্ত হই
বধীর হয়ে গেছে মান অপমানবোধ, শুধু পাই হাততালি শুনতে
না কী শুনছেনা কান আমার তেমন করে আর, হয়ে গেছে কান দুটো আলসে
ঠিক ভুল নিয়ে আর তর্ক করিনা ভাই, সাতে পাঁচে নেই কোন আর
নির্ঝঞ্ঝাটে মালা, বেলা বোস গাই, কারো লেঁজে পড়ে না যে পা
আছে গ্রামোফোন মুখে দিয়ে কুকুরের ছানাটা, ঠিকঠাক গান বেচে চলছে
তাই সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি আমি, আগের থেকে আলসে
কে কোথায় রাস্তায় হাটু মুড়ে কেঁদে যায়, করিনা যে তার খেয়াল
চল্লিশ পাড় হয়ে গেছে তাই জগতটা এখন চার দেয়াল
শুধু যাপসা হয়ে যায় মাঝে মাঝে সব, এটা কি সত্যি চালসে
নাকী দেখছেনা চোখ, শুনছেনা কান, হয়ে গেছে সবকিছু আলসে... চলুক



অ্যালবামঃ অসময়

শীতকালের চিঠি

শীতকালের রাতগুলো কাটতে যে চায়না লিখছি এই চিঠি তাই যে তোকে
বাড়ির পেছনের বস্তিটা নিঃস্তব্দ হঠাৎ আজ রাতে কেন, কে জানে
শুধু মসজিদ থেকে ভেসে আসা বেসুরো প্রার্থনা লাগছে ভালো কেন জানিনা
মনে পড়ে যাচ্ছে ফেলে আসা কথা, ফেলে আসা ব্যথা হঠাৎ তোরে।

অমল এসেছিল অনেক কথা হলো, হাফ বোতল রাম এখনো আছে
নন্দা ভালোই আছে, নাঠক করেনা সে, নতুন করে জীবন সাঁজাচ্ছে
আর আমি এখনো যে করছি অভিনয়, খান দু'য়েক ছবি মৃণাল সেনের
স্বপ্না গিয়েছিল বেড়াতে, দেখা হয় তোর সাথে,
বললে তুই ভালোই আছিস, শুধু টুথব্রাশ নিয়ে পকেটে

অন্য কিছু একটা করবো বলে সবাই চরস খেলাম, কেউ চুল কাটিনি
লাল বইটা লুকিয়ে পড়ার সময় ভবিষ্যতের কথা কেউ ভাবিনি
রাস্তায় ছাত্রের নাঠকের পোস্টার মেরে, বব ডিলানে বঙ্গানুবাদটা করে
বাদল সরকারের মিছিলে দাড়িয়ে হারিয়ে গেলাম কে কোথায়
অমল তার ছেলের নাম রেখেছে বিমল, স্কুটার কিনেছে শ্বশুরের পয়সায়
রিতা ইন্দ্রজিতকে বিয়ে করেনি, ইন্দ্র চলে গেছে দূঃখে দুবাই
নন্দা এখনো মাঝ রাত্রিরে কাঁদে, ঘুমচ্ছে সে ঘুমের ঔষধ খেয়ে
আর আমি এখনো যে করছি অভিনয়, খান দু'য়েক ছবি, তাও মৃণাল সেনের

স্বপ্না গিয়েছিল বেড়াতে, দেখা হয় তোর সাথে,
বললে তুই একই আছিস, শুধু টুথব্রাশ নিয়ে পকেটে



অ্যালবমঃ অসময়

কত শিক্ষা

কত শিক্ষা, কত বুদ্ধি, কত কোটি কোটি টাকার বদলে
বানিয়েছে বোমা আমার দেশ আমায় রক্ষা করবে বলে
সেই একই দেশে গোটে শহর যায় ভেসে বানের জলে
কিসের জন্য মানুষ চাঁদে যেতে চায়
যদি বছর বছর একই মানুষ বানের জলে ভেসে যায়
এত অংক কষা, এত যন্ত্রপাতি কিসের দায়

কোন হতাশায় বলেছিল হে রাম, মোহন দাস
সেই থেকে শুরু কী রাম বংশের পরিহাস
গেল ভেসে গেল রক্তে আমার পনেরই অগাস্ট
কোন সাহসে বুকে বোমা বাঁধে একটা তামিল মেয়ে
কিসের জন্য ধ্বংসের স্বপ্ন দেখে সে
নিভে গেল কেন তার চোখের আলো ঐ কচি বয়সে
কী লিখব, কী গাইব আমি আজ এ অসময়
কিসের জন্য তোমাদের এই জলসায়
আমার কলম থেমে যায় বারবার একই লজ্জায়
সত্যি কথা বলতে কি পারছি আমি তোমায়
আমার পঞ্চাশ বছরের স্বাধীনতা গেল কোথায়



অ্যালবামঃ অসময়

ম্যারী এ্যান

কালো সাহেবের মেয়ে, ইশকুল পালিয়ে
ধরতে তোমার দুটো হাত
কত মার খেয়েছি, মুখ বুজে সয়েছি
অন্যায় কত অপবাদ
বয়স তখন ছিলো, পনেরো তাই ছিলো
স্বপ্ন দেখার ব্যারাম
মাথার ভেতর ছিলো, এলভিস প্রিসলি
খাতার ভেতর তোমার নাম
ম্যারী এ্যান, ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী

করে সব এলোমেলো, এলভিস চলে গেলো
কেটে গেলো বছর অনেক
তোমারো মামা কাকা, একে একে পাড়ি দিলো
সব্বাই মিলে বিলেত
রয়ে গেলে তোমরা আকড়ে রিপন স্ট্রিট
দু’টো ঘর সিড়ির তলায়
নোনা দেয়াল থেকে, যীশু ছলছল চোখে
হাত তুলে আশ্বাস দেয় এখনো
ম্যারী এ্যান। ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী

রিকশায় চড়ে তুমি দুলে দুলে চলে যাও
আমার পাড়া দিয়ে প্রায়
পাক ধরে গেছে চুলে গাল দুটো গেছে ঝুলে
নিয়মিত অবহেলায়
কোন এক অফিসেতে শর্ট হ্যান্ড নিতে নিতে
নখগুলো গেছে ক্ষয়ে
ছোট্ট বেলার প্রেম, আমার কালো মেম
কোথায় গেলে হারিয়ে
ম্যারী এ্যান, ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী

তোমার বাবা ছিলো, ইঞ্জিন ড্রাইভার
আমার বনেদি ব্যবসা
বংশের ইজ্জত রাখতে হলে
বউ হতে হবে ফর্সা
বাঙালীর ছেলে তাই, গলায় গামছা দিয়ে
ফেললাম করে বিয়ে
ছোট্ট বেলার প্রেম আমার কালো মেম
কোথায় গেলে হারিয়ে
ম্যারী এ্যান, ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী

বৃষ্টি

আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি একেছি
আমি রোদে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি
আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি
শুধু তুমি চলে যাবে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
চারটে দেয়াল মানেই নয়তো ঘর
নিজের ঘরেও অনেক মানুষ পর
কখন কিসের টানে মানুষ
পায় যে খুঁজে বাঁচার মানে
ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর;
আমি অনেক ভেঙ্গেচুরেও আবার শুরু করেছি
আবার পাওয়ার আশায় ঘুরে মরেছি
আমি অনেক হেরে গিয়েও হারটা স্বীকার করিনি
শুধু তোমায় হারাবো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি

হারিয়ে গেছে তরতাজা সময়
হারিয়ে যেতে করেনি আমার ভয়
কখন কিসের টানে মানুষ
পায় যে খুঁজে বাঁচার মানে
ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর
আমি অনেক স্রোতে বয়ে গিয়ে, অনেক ঠকেছি
আমি আগুন থেকে, ঠেকে শিখে অনেক পুড়েছি
আমি অনেক কষ্টে অনেক কিছুই দিতে শিখেছি
শুধু তোমায় বিদায় দিতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।



তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে তাই
আমি স্বপ্ন দেখে যাই
আর একটা করে দিন চলে যায়,
সুদিন আসবে বলে ওরা আগুন জ্বালায়
আর হাজার হাজার মানুষ মরে যায়;
দেখবে বলে আকাশটাকে মাথা উঁচু করে
শুধুই নোংরা কালো ধোঁয়া ঢেকে যায়
কাছে আসবে বলে অন্ধকারে হাতড়ে মরে ওরা
তবু শরীর দুটো থাকে আলাদা,
আমার মনটা তবু আশা করে যায়
এই মনটা তবু ভালবাসতে চায়
এই মন… আশা করে যায়।


সময় ছুটে চলে, আমি আটকে পড়ে রই
আমার রাস্তা হাটে আমি হাটিনা
চোখে নিয়ে স্বপ্ন, বুকে নিয়ে অনেক অনেক কথা
আমার বয়েস বাড়ে, আমি বাড়িনা;
তুমি আসবে বলে তাই
আমি স্বপ্ন দেখে যাই
আর একটা করে দিন চলে যায়,
সুদিন আসবে বলে ওরা আগুন জ্বালায়
আর বেকার কিছু মানুষ মরে যায়।


আমার মনটা তবু আশা করে যায়
এই মনটা তবু ভালবাসতে চায়
এই মন… আশা করে যায়

দু’টো মানুষ

দু’টো মানুষ এসাথে কত পথ চলা
হাতে হাত রেখে কথা বলা
কেন সব করে অবহেলা
কেন শেষ-মেষে এসে বিদায়
ফুলদানি,
আছড়ে ভেঙ্গে চুড়মার
ফুল জল সব একাকার
নেমে আসে অন্ধকার
জানলার বাইরে নেমে আসে রাত
দু’টো বালিশ
কত স্বপ্ন ভালোবাসা বোঝাই
দেখে যায় এই কুৎসিত লড়াই
আশা আকাংখা সব পুড়ে ছাই
কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না

টেবিল ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে
ভাঙ্গাচোড়া মন দুটো গুমড়ে গুমড়ে মরে
দুজনেই বসে থাকে হাত ধরবে বলে
কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলে না
ভগবান তাই নেমে আসে না
আসে সকাল
চোখ মুছে চিঠি লেখা
ব্রিফকেস হাতে ট্যাক্সি ডাকা
ফিরে না তাকিয়ে দেখা


ইশ্,  এইভাবে কেউ চলে যায়

রাজু রাণী রেম্বু

তিন রাস্তার মোড়ে তিন বন্ধু
ছোটখাট তিনটে জীবন
রাজু রাণী রেম্বু
আজগগে ফুলও না, কাল ভিখেরী, পরশু পাউরুটি চুর
রাজু রাণী রেম্বু
দেখা হয় আমাদের তিন রাস্তার মোড়ে প্রায়
ট্যাক্সি খোজার ফাঁকে হামেশাই
অগুণতি মানুষের ভিড়ে আমি ঠিক খুজে পাই
হার না মানা প্রেমিকের তিন জোড়া চোখ
হঠাৎ পিছন থেকে চমকে দিয়ে ডাকে
নাকের সিকনি আর হাসি নিয়ে চকচকে
রাজু রাণী রেম্বু

শীতের সকাল আসে, লাল ফুল নিয়ে হাসে ট্যাক্সির জানালায়
রাজু রাণী রেম্বু
হিন্দি ছবির নাচ হুবহু ফুটপাতে গ্রীষ্মের দুপুর বেলায়
রাজু রাণী রেম্বু
হয়তোবা ফুটো পকেটের আদুলির বিনিময়
একরাশ সুখে টান দিয়ে প্রান খুলে গান গায়
চলন্ত মারুতি থেকে ছুড়ে দেয়া  করুনায়
কেনা যায় ফ্রুটকেক, কেনা যায় ম্যাকিনি সু

আমার এই শহরের প্রান ভোমরা আছে, সাগরের তলায় নয়
আছে রাজু রাণী রেম্বু
শ্বাসরুদ্ধ তবু মরছেনা কিছুতেই কলকাতা তাই
রাজু রাণী রেম্বু
বৃষ্টি ভেঁজা ঐ বাসের হাতলটায়
একফালি কুটবন আকড়ে ঝুলে থাকায়
নিদারুনভাবে এই ভীষন করে বাঁচায়
পাই আমি কোথা থেকে, কোথা থেকে সাহস।

স্যামসন

জ্বলছে নিভছে নিয়নের বিগ্গাপন
বৃষ্টিতে ভিঁজে গেছে রাস্তা, ভেঁজা ভেঁজা মন
লাস্ট ট্রাম ধরে ঘরে ফিরবে আবার স্যামসন
সাথে নিয়ে সঙ্গী শুধুই স্যাক্সোফোন
পাঁচতারা হোটেলের বাঁজনাওয়ালা ফিরে ঘর
এঁদো গলি সিড়ি ভেঙে স্যাঁতসেঁতে ছাদের উপর
 সস্তা মদে গেছে বিছানাটা ভিঁজে ধুয়ে মুছে গেছে যৌবন
স্যামসন আর তার সঙ্গী  স্যাক্সোফোন
এইভাবে খুন হয়ে যায় কত কত স্যামসন
হোটেলের কোণে খুন হয় কত কত স্যামসন
গোগ্রাসে গিলে চলে শহরটা, দেয় নাকো কান
এইভাবে খুন হয়ে যায় কত জীবনের গান

ডিলাইলা এসেছিল জীবনে একবার
দু'দিনের প্রেম গেছে দু'দিনে ভেঙ্গে চুরমার
বেচে নিয়ে চলে গেছে অন্য আরেকজন
ফেলে রেখে স্যামসন আর তার স্যাক্সোফোন
ক্রুশবিদ্ধ যিশু ক্যালেন্ডার থেকে কাঁদে
তারই মতো স্যামসন আটকে পড়েছে এক ফাঁদে
সস্তা হিন্দি সুর বাঁজিয়েই যেতে হবে এইভাবে যাবৎ জীবন
হোটেলের কোণে আলো আঁধারী নির্বাসন

আসবেনা ডিলাইলা কোনদিন বাঁচাতে তাকে
এইভাবে পঁচে গলে পাঁচতারা নরকে
নিঃশেষ হয়ে যাবে একদিন দু'জন
স্যামসন আর তার সঙ্গী স্যাক্সোফোন
ফুসফুসে লুকোনো আছে কত কত গান
জানবেনা কেউ সেই স্যাক্সোফোনের অভিমান
শুধু মাঝরাতে আকাশের চাঁদটা ঘুম ভেঙ্গে উঠে
শুনবে স্যামসনের সেই স্যাক্সোফোন 

যাচ্ছে চলে

যাচ্ছে চলে ট্রাম বাস ঠেলা টেম্পো


যাচ্ছে চলে শীত গ্রীষ্ম বসন্ত
যাচ্ছে চলে সব হন্তদন্ত হয়ে
এতসব যাচ্ছে কোথায়
যাচ্ছে গড়িয়ে পা কাঁটা ভিখেরীর দল
যাচ্ছে কাঁধে নিয়ে গ্যাস বাতি ঝলমল
যাচ্ছে শুকিয়ে কত চোখের জল
এতসব যাচ্ছে কোথায়

যাচ্ছে সরে মেঘ চাঁদটাকে ছাড়িয়ে
যাচ্ছে সবাই রোজ জন্জাল মারিয়ে
যাচ্ছে নেশার ঘোর জিবটাও জড়িয়ে
এতসব যাচ্ছে কোথায়
যাচ্ছে জমে কত আড্ডা তর্ক
যাচ্ছে ভেঙ্গে কত কত সম্পর্ক
বিগড়ে যাচ্ছে কতো দম দেয়া যন্ত্র
এতসব যাচ্ছে কোথায়

যাচ্ছে কালো হাতটাকে করা শক্ত
যাচ্ছে জুটে কত ভন্ডের ভক্ত
যাচ্ছে ঝরে কত মানুষের রক্ত
এত সব যাচ্ছে কোথায়
যাচ্ছে পুলিশ দিয়ে হরতাল ঠেঙানো
যাচ্ছে সৈন্যদের যুদ্ধটা করানো
যাচ্ছে মিথ্যে কথা সহজে রটানো
এত সব যাচ্ছে কোথায়
যাচ্ছে খুলে আবার ইশ্কুল গুলো
যাচ্ছে পড়ে মাথার সব চুলগুলো
যাচ্ছে হয়ে বারবার এক ভুলগুলো
এতসব যাচ্ছে কোথায়

যাচ্ছে হলদে হয়ে অ্যালবামের ছবিটা
যাচ্ছে ভুলে যাওয়া কত কত কবিতা
যাচ্ছে জন্ম দেয়া টেস্ট টিউব বেবিটা
এত সব যাচ্ছে কোথায়
যাচ্ছে জগৎটা তাই ঘুরে যাচ্ছে
যাচ্ছে পেটটা ভরে তবু খিদে পাচ্ছে
যাচ্ছে তাই যে কতকিছু রোজ ঘটছে
এতসব যাচ্ছে কোথায়

যাচ্ছেনা এড়ানো শেষ শুয়ে পড়াটা
যাচ্ছেনা থামানো শেষ কাঁধে চড়াটা
যাচ্ছেনা জাগানো শশ্মানের মরাটকে
যাচ্ছেনা তাই সে কোথায়



ক্যালসিয়াম


ডাক্তার বলছে ক্যালসিয়ামটা কম
টিউটর বলছে অংকটা কমজুরি
ছোট'কা বলছে দুচ্ছাই নেই তোর দম
ঠাম্মা বলছে আঁচার গেছে চুরি
পিসি বলছে বকে গেছে হিন্দি ছবি দেখে
দিদি বলছে ভীষন আনস্মার্ট
দাদু বলছে সময়টাই গোলমেলে করবে কী
জ্যাঠা বলছে পেঁদিয়ে উল্কাট
চাঁদের বাতি বলছে আয়
ছুটে আয় খালি পায়
আকাশ বলছে গলা খুলে গা
দুপুর বলছে কান্না পেলে
ছাদে উঠে গিয়ে
সবাই যা বলঝে ভুলে যা

মা বলছে দুধটা একদম মুখে তুলছেনা
হরলিক্স বলছে এমনি এমনি খাও
আন্টি বলছে আগে এত কেয়ারলেস ছিলনা
বাবা বলছে জাহান্নামে যাও
পাশের বাড়ির বৌদি বলছে আঁকার স্কুলে দিন না
মামা বলছে স্পোকেন ইংলিশ উইক
দাদু বলছে সময়টাই গোলমেলে করবে কী
জ্যাঠা বলছে পেঁদালেই সব ঠিক

সুমন বলছে পারো যদি অন্য ছবি এঁকো
টিনটিন বলছো চলো অ্যান্টার্কটিকা
টিভি বলছে বলো আই এ্যাম এ্যা কম্প্লেন বয়
অঞ্জন বলছে টিভি দেখোনা
টকসেটাই বা কেন লেখা বন্ধ করে দিল
ফেলুদা কিছুই বলছে না
দাদু বলছে সময়টাই গোলমেলে করবে কী
জ্যাঠা বলছে পেঁদালেই সোজা
ছাদের পাচিল বলছে আয়
ছুটে আয় খালি পায়
আকাশ বলছে গলা খুলে গা
দুপুর বলছে কান্না পেলে
ছাদে উঠে গিয়ে
সবাই যা বলঝে ভুলে যা

জিগির ব্যাম জিগির ব্যাম জিগির ব্যাম ব্যাম বো

রমা

মাগো আমার মাগো জানি
অনেক কষ্ট পাবে তুমি
তবু আমার নেই কোন উপায়
যেতে আমায় হবে সে যে
ট্যাক্সি নিয়ে বসে আছে
বাসটা পেতে আমার অপেক্ষায়
জি'য়ের সাঁজে ঘোমটা টেনে
বাবা কাকার চোখ এড়িয়ে
যাচ্ছি ছেড়ে ছোটবেলার ঘর
অনেক ভাবনা চিন্তা করেও
পারছিনা যে মেনে নিতে
তোমাদের পছন্দ করা বর
মাগো মা, চললাম আমি
করতে নিজের সংসার
মাগো মা, ফিরে আসছিনা
ইতি তোমার আদরের রমা

গয়নাগাটি বেনারশী
সবই খুলে যাচ্ছি চলে
শুধু নিলাম একটা মাত্র হার
আর আছে তোমার দেয়া
ছোটবেলার সাহস অনেক
সেটাই সবচে বড় উপহার
অনেক অপমানোর বোঝা
রইলো তোমাদের কপালে
জিয়ের মুখে কেলেংকারিটা
কিন্তু মাগো নয় যে এ আর
পুতুল নিয়ে খেলনাবাড়ি
সত্যি সত্যি সংসার আমার
মাগো মা, চললাম আমি
করতে নিজের সংসার
মাগো মা, ফিরে আসছিনা
ইতি তোমার আদরের রমা

মাগো তুমি বলেছিলে
মানুষ চেনা শক্ত বড়
মনটা আসল, পয়সা কড়ি নয়
অনেক বড়লোকের ছেলে
ছলে বলে মিথ্যে বলে
ঠকিয়ে নিতে চাইবে যে আমায়
কিন্তু এ যে দেখতে শুনতে
নয় যে তেমন দারুণ ভালো
আছে যে তার হাজার গন্ডা দোষ
নেইকো যে তার টাকাওয়ালা বাবা কাকা
আছে শুধু সত্যি কথা বলার সৎ সাহস
মাগো মা, চললাম আমি
করতে নিজের সংসার
মাগো মা, ফিরে আসছিনা
ইতি তোমার আদরের রমা

পুরনো গিটার

এই বুড়ো পুরনো গিটার দিয়েছে, কত কিছু দিয়েছে
ছোটখাট সুখ, মান অভিমান,দুঃখের গান দিয়েছে
রোজ রোজ কত কত হাজার হাজার ভয় মনে যখন ভিড় করেছে
ঘরের কোণে আপন মনে, সেই ভয়গুলো কাটিয়ে দিয়েছে
ছেলেবেলার সেই পাতাঝরা পাহাড়ে ঘুরেছে একেবেকে মন যখন
এই বুড়ো পুরনো গিটার ছিল সঙ্গী আমার তখন
কাল কেটে গেছে কত, কেটেছে আঙ্গুল, কত রাত জেগে জেগে কেটেছে
জীবনে প্রথমবার ভালবাসা হারানোর যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে
এই বুড়ো পুরনো গিটার

কলের গানের সুরে হারিয়ে গিয়ে, খুজে পাওয়া নিজেকে আবার
পৃথিবীর কত কথা কাছে এনে দিয়েছে আমার পুরনো গিটার
জন লেনানের সোচ্চার ভালবাসা, বব ডিলানের অভিমান
হুট করে ভাললেগে ভালবেসে, কাওকে তাড়াহুড়ো করে লেখা গান
ফেলে আসা কত মুখ, কত নাম ঠিকানা বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে
নানা কথা, নানা সুরে গান নিয়ে ঘুরে ঘুরে সুমনের কাছে এনে দিয়েছে
এই বুড়ো পুরনো গিটার

ইদানিং হঠাৎ করে অনেক ভালবাসার মাঝে এনে ফেলেছে আমায়
নিজের মত করে কিছু কথা বলবার সুযোগ করে দিয়েছে আমায়
ভাবিনিতো কোনদিন আমার এই বন্ধুটা, হয়ে যাবে বন্ধু সবার
ভাবিনিতো কোনদিন শুনবে সবাই আমার পুরনো গিটার
এই বুড়ো পুরনো গিটার, দিয়েছে তোমাকে দিয়েছে
এলোমেলো কত সব অন্য লোকের গানে তোমাকে কাছে টেনে নিয়েছে
তোমাকে নিয়ে কোন গান লেখা হয়নি, চেষ্টা করেছি বহুবার
রয়ে গেছে সব কথা অলিখিত তার কাছে আমার পুরনো গিটার
সে যে আমার পুরনো গিটার 

অদ্ভুত ভালো লোকটা

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা
তার অনেক কিছু দেখা চোখটা
স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তা স্বপ্ন সত্যি হয়
সে কি কিছুটা তোমার আর কিছুটা আমার মতো নয়
কিছুটা তোমার সে কি, কিছুটা আমার মতো নয়

চারমিনারের সৌজন্যে শুরু করে সে তার সকাল
দিনের শেষে, ঘুমের দেশে ঘুরে আসে চিরকাল
নেই তার কোন জুড়ি, গাড়ি আছে শুধু ঐ বিজ্জ বিশাল
কোন দলে নাম নেই তবু দলাদলি করে কেটে গেল সবসময়

অফিসে গিয়ে আগে কলারে রুমাল আর এক গ্লাস জল
কাজে নেই মন তার ক্রিকেটের চিন্তায় জিতে কোন দল
বামপন্থি গান শুনলে পরে করে চোখ ছলছল
লক্ষী বারে দাদায় উপোস করে, পরে হ্যাংলা জিন্স বিজয়ায়

ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই
বোতাম ছেড়া শার্ট নিয়ে সুদুর গায়
তিস্তা নদীর ধার ধরে সোজা হিমালয়
স্বপ্ন দেখে সে যদি কোনদিন তার স্বপ্ন সত্যি হয়


অ্যালবাম: কেউ গান গায়

ফিরে আসবো

ফেলে আপোসের স্বভাবটা ফিরে আসবো
ফেলে জিবের এই বিস্বাদটা ফিরে আসবো
ফেলে দশটা আর পাঁচটা ফিরে আসবো
ফেলে এক রুটের বাসটা ফিরে আসবো
ফেলে মিথ্যে কথার ক্লাসটা ফিরে আসবো
ফেলে হলদে সিলেবাসটা ফিরে আসবো
ফেলে পিছিয়ে পড়া মনটা ফিরে আসবো
ফেলে বয়েসের বারনটা ফিরে আসবো
ফেলে রোজকার বাজেট খরচা ফিরে আসবো
ফেলে নিন্দে পরচর্চা ফিরে আসবো
ফিরে আসবো তুমি কেঁদোনা
ফেলে আপোসের চাপা বেদনা
সবাই এখানে আবার  আসবো
ফিরে আসবো, ফিরে আসবো, ফিরে আসবো

ফেলে পঁচা এঁদো গলিটা ফিরে আসবো
ফেলে ফুটো বাজারের তলিটা ফিরে আসবো
ফেলে কবরে খবরটা ফিরে আসবো
ফেলে কাগজের টোপরটা ফিরে আসবো
ফেলে সেলুনের কাঁছিটা ফিরে আসবো
ফেলে সর্দি কাশি হাঁচিটা ফিরে আসবো
ফেলে মতবাদের রঙটা ফিরে আসবো
ফেলে ধর্মের অংবংটা ফিরে আসবো
ভুলে হেরে যাওয়ার জ্বালাটা ফিরে আসবো
খুলে মনের জানালাটা আবার আসবো

নিয়ে আকাশের নীল গন্ধ ফিরে আসবো
নিয়ে হাজার প্রশ্ন দ্বন্দ্ব ফিরে আসবো
নিয়ে ছেলেবেলার সুখটা ফিরে আসবো
সেই মেঘলা দুপুরটা নিয়ে আসবো
নিয়ে পাগলা ক্ষ্যাপা মনটা ফিরে আসবো
সেই বাউলের গানটা নিয়ে আসবো
নিয়ে সহজ সরল ভাষাটা ফিরে আসবো
সব বদলে দেবার নেশাটা নিয়ে আসবো
ভাল লাগছে নিজেকে আবার ভালবাসবো
আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো

অ্যালবাম: কেউ গান গায়