অঞ্জন দত্ত, জন্ম: জানুয়ারি ১৯, ১৯৫৩, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। আরো জানতে
এই ব্লগটা অঞ্জনের গান প্রেমীদের জন্য। আমার হাতে এখন অফুরন্ত সময়, অঞ্জনের গান শুনছি, ভাবলাম লিখে রাখি, পড়া যাবে কিন্তু তাও হচ্ছেনা। পায়ের সাথে চোখের সমস্যায়ও ভুগছি। শুনে শুনে লেখা তাই ভুল থাকবেই, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

বসে আছি ইষ্টিশনেতে

বসে আছি ইষ্টিশনেতে
লেবু লজেন্সের শিশিটা হাতে
খোকা কোকিলটার গলা শুকিয়ে কাঠ
গাড়ি আজ লেটে দৌড়াচ্ছে
বাড়ি ছেড়েছি ডিসেম্বর মাসে
পালাতে হয়নি দাদা তাড়িয়েছে
ফিরতে হলে আড়াইশ টাকা
দিতে হবে মাসের শেষে
অংকতে আশি পেয়েছিলাম একবার
মা ভেবেছিল হবো ইন্জিনিয়ার
বাবা কিছুই ভাবতে পারেনি
বাবা ছিলনা যে আমার


কালো ঘর বাড়ি শনশন যায় সরে
ট্রেনের ধুলাতে রোজ দুপুরে
পায়ের তলের সেই ধুলাটা
যায় মনে পড়ে যায় আমার
কু ঝিক ঝিক করে যখন রাত আসে
চাঁদটা মনে হয় অ্যালুমিনিয়ামের
কারখানার ঐ  কালো ধুয়াটা
কেন যে আমায় কাঁদায়।
দাদা একটা মিনি হবে কি
একটাও লেবু হয়নি বিক্রি
গতকালের পনের টাকা থেকে
চেকারকে দিতে হবে দশ


একবার ভেবেছিলাম এই গলাটা
যায় যদি যাক ট্রেনের তলাতে
কিন্তু ঐ অ্যালুমিনিয়ামের চাঁদ
দেয়নি পালাতে আমায়
একটু আগে গরি আর শিবু
দম দিতে বলল বোম শঙ্করে
মাথাটা তাই কেমন ঝিম ঝিম করছে
গলাটা শুকিয়ে কাঠ
দাদা একটা মিনি হবে কি
একটাও লেবু হয়নি বিক্রি
গতকালের পনের টাকা থেকে
চেকারকে দিতে হবে দশ

এটা কি ২৪৪১১৩৯

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা
সমন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না


চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি
আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস
স্টার্টিংয়েই ওরা ১১০০ দেবে তিন মাস পরে কনফার্ম
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না
এটা কি ২৪৪১১৩৯
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো ২৪৪১১৩৯
দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার
মিটার যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনের
জরুরি খুব জরুরি দরকার


স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি
এতোদিন ধরে এতো অপেক্ষা
রাস্তার কতো সস্তা হোটেলে
বদ্ধ ক্যাবিনে বন্দী দুজনে
রুদ্ধশ্বাস কতো প্রতীক্ষা
আর কিছু দিন তারপর বেলা মুক্তি
কসবার ঐ নীল দেয়ালের ঘর
সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে
তোমার আমার নাল-নীল সংসার


চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছো
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি
কান্নাকাটির হল্লাহাটির সময় গেছে পেরিয়ে
হ্যালো তুমি শুনতে পাচ্ছো কি


হ্যালো ধুর ছাই হ্যালো


মন আমার



তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে, বন্ধুরা বলে
শুনায় তোমার কথা আমায় প্রায়
তাই শুনলাম তোমার কথা গান শোনার ছলে
শুনলাম তোমাকে তাই
অনেক কথা, কত কথা, কত কথার সুরে
ভরে গেল ভেতরটা আমার
ইচ্ছে হলো বলতে কথা সুরের তালে তালে
আমার ইচ্ছে হলো বাঁজাতে গীটার
মন আমার, মন আমার, মন আমার

মিথ্য কথায় হারিয়ে যাওয়া ব্যর্থ এ বাজারে
অর্থ নিয়ে এলো তোমার গান
গানের ভাষা নতুন আশা উঠলো নেচে তোমার কথায়
উঠলো নেচে অনেকের প্রান
সত্যি কথা সহজ করে বলার সাহস পেলাম ফিরে
কোথায় যেন ভেতরে আমার
কথার নেশা ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছেটা যে হলো আবার
ইচ্ছে হলো বাঁজাতে গীটার 
মন আমার, মন আমার, মন আমার

গানের কোন প্রস্তুতি নেই, নেই যে শেকড় বাকড়
মালকোষ কী পিলু ভৈরবী
গলায় আমার নেই যে কোন রেওয়াজ করার স্বভাব
এই অভাব আমার থাকবে চিরদিন
আমার শুধু ছিল, আছে কাঠখোট্টা বাস্তবটা
দিবা রাত্রি আপোষ আর আপোষ
রবীন্দ্র কি গণ সঙ্গীত কোনটাই ঠিক দিচ্ছিলনা
বুকের ভেতর রেগে উঠার রোষ
গানটা আমার গাইবার এই ইচ্ছেটা যে ছিলনা তো
গানটা ছিল শুধুই শোনার
অভ্যেসটা ছিল কথার তালে কথার জবাব দেওয়া
কথা কেড়ে নেবার স্বভাব
তোমার কথার সুত্র ধরে পথ হারিয়ে নতুন করে
ইচ্ছে হলো কথাটা বলার
কথায় কথা বাড়ে, তাই বলছি ছোট্ট করে
আমার ইচ্ছে হলো বাঁজাতে গীটার
মন আমার, মন আমার, মন আমার

তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে, অনেকেই বলে
শুনায় তোমার কথা আমায় প্রায়
তাই শুনলাম তোমার কথা গান শোনার ছলে
শুনলাম তোমাকে চাই
অনেক কথা, কত কথা, কত কথার সুরে
ভরে গেল ভেতরটা আমার
ইচ্ছে হলো বলতে কথা সুরের তালে তালে
আমার ইচ্ছে হলো বাঁজাতে গীটার
মন আমার, মন আমার, মন আমার

দার্জিলিং

খাদের ধারের রেলিঙটা
সেই দুষ্টু দু ধ সিড়িংটা
আমার শৈশবের দার্জিলিংটা
জানলার কাছে টপকে পেয়ে
ছবি এঁকেছি নিঃশ্বাসে
পাহাড় আঁকা কত সোজা
হারিয়ে গেছে সেই ড্রয়িং খাতা

চারটা ঠোঁটের ভালাবাসা
খুদে চোখে কত আশা
যখন তখন সাদা কুয়াশা
খাদে নেমে প্রথম সিগারেট
সেখান থেকে স্কুলের গেট
দশ মিনিট দৌড়ে নইলে লেট
রোল কল হয়ে গেছে এবার বেত

ঘুম সোনাদা ঘুম পেরিয়ে
একা বেকা রাস্তা ধরে
যখন তখন পৌছে যাওয়া যায়
কিন্তু সেই দু ধ সিড়িংটা
হারিয়ে গেছে যে আজ কোথায়
খাদে নামতে আজ ভয় করে
নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরার

আকাশ ভরা

আকাশ ভরা সূর্য তারা
আকাশমুখী সারি সারি
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া
ঠাসাঠাসি বাক্স বাড়ি
এখান থেকেই চলার শুরু
এখান থেকেই হামাগুড়ি
এখানটাতেই আমার বাসা
আমার বাড়ি …. 

বারোতলার ওপর থেকে
বারো বছর কেটে গেছে
ইস্কুলটা যাওয়া ছাড়া
নামা হয়না মাটির কাছে
শোবার ঘরের দেওয়ালটাময়
হাঁস মুরগী অনেক নাচে
তবুও রানার চোখের ভেতর
কোথাও যেন কান্না ভাসে৷
সেখান থেকে একটু দূরে
একটুখানি এগিয়ে গেলে
একলা থাকেন নন্দীবাবু
বন্দী সেও যে বয়সকালে
সংসারটার হাল ধরেছে
বখাটে তার ছোট ছেলে
এক কাপ চা দিয়ে গেছে
কখন জানি সাত সকালে
রেডিওটার ব্যাটারিটা হঠাৎ
কবে গেল ক্ষয়ে
খাটের থেকে নামতে মানা
বুকের ব্যাথা গেছে সয়ে
নীলিমার মা তাই তো যে আর
ভাবেনা আর সংসারটা নিয়ে
এঁদো গলির সেঁদো ঘরে
সবই কেমন বয়ে গেছে
এখানটাতেই আটকে পরা
এখানটাতেই ঘুরোঘুরি
এখানটাতেই আমার বাসা
আমার বাড়ি

চৌধুরীদের একুশ তলায়
মদের নেশায় উঁচু গলায়
ঝগড়া চলে গভীর রাতে
লাজলজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে যায়
কোর্ট কাছারি অনেক হল
হলনা যে ছাড়াছাড়ি
সম্পত্তি আঁকড়ে ধরে
গভীর রাতের মারামারি৷
সেখান থেকে একটু দূরে
পাড়ার মোড়টা একটু ঘুরে
অলিগলি পাকস্থলীর
ভেতর কারা গুমড়ে মরে
বলি হল আরেকটা প্রাণ
মস্তানদের ছোরাছুরির
এখানটাতেই আমার বাসা
আমার বাড়ি সারি সারি

চিলেকোঠার বারান্দাটা
বন্ধ কেন জানো কি তা?
এখান থেকেই লাফিয়ে পরে
লাহাবাড়ির অনিন্দিতা
গভীর রাতে তাইতো কেউ আর
ওঠে না যে ওদের ছাদে
অন্ধকারের বন্ধ ঘরে
কারা যেন ডুকরে কাঁদে
সেখান থেকে একটু দূরে
ছাদের পাঁচিলটা ঘুরে
এক চিলতে রোদ্দুরেতে
ছোট্ট মেয়ে নামতা পড়ে
তাই তো কালো ইঁটের ফাঁকে
বট পাতাটা জিভ ভ্যাংচায়
পাড়ার নেড়ি, বাচ্চাটাকে
বুকে করে হাঁটতে শেখায়৷
এখানটাতেই আটকে পরা
এখানটাতেই ঘুরোঘুরি
এখানটাতেই আমার বাসা
আমার বাড়ি

আকাশ ভরা সূর্য তারা
আকাশমুখী সারি সারি
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া
ঠাসাঠাসি বাক্স বাড়ি
এখান থেকে চলার শুরু
এখান থেকেই হামাগুড়ি
এখানটাতেই আমার বাসা
তোমার ভালোবাসার বাড়ি৷

তুমি না থাকলে

তুমি না থাকলে সকালটা এতো মিষ্টি হতো না
তুমি না থাকলে মেঘ করে যেত বৃষ্টি হতো না
তুমি না থাকলে মন কষাকষি করে হাসাহাসি নাক ঘষাঘষি
.রাপা রাপ্পাপা রাম পাম পা

তুমি না থাকলে চাঁদটার গায়ে পড়ে যেত মরচে
তুমি না থাকলে কিপটে লোকটা হতো না যে খরচে..

তুমি না থাকলে স্বপ্নের রঙ হয়ে যেত খয়েরী
বন বন করে দুনিয়াটা এই পারতো না ঘুরতে....
তুমি না থাকলে রবীন্দ্রনাথ কালীর দোয়াত মাথায় ঠুকে হতো কুপোকাত
রাপা রাপ্পাপা রাম পাম পা

তুমি না থাকলে সুমন কেলেঙ্কারী করতো কতো
গিটার ফেলে গুয়েতেমালায় নামতা শেখাতে হতো
পাশের বাড়ির মেয়েটা পাশের পাড়ার ছেলের সাথে
তুমি না থাকলে এই ভাবে কি বাড়িটা ছেড়ে পালাতো!
তুমি না থাকলে তাজমহলটা বানানোই হতো না
লাগালাগি এই কাটাকাটি কিছু থামানোই যেতো না
তুমি না থাকলে মোনালিসা কবে হয়ে যেতে গম্ভীর
তুমি না থাকলে তোমার চিঠি জমানোই হতো না
তুমি না থাকলে রোমিও কবে হোমিওপ্যাথির দোকান খুলে জমিয়ে দিত
রাপা রাপাপ্পা রাম পাম পা..

আলীবাবা

নাম আমার আলীবাবা, বয়স আমার দশ
আজকে দিনটা বড়, আজকে যিশু দিবস,
চারটে মুরগী ছাড়ালে, একটা টাকার নোট
ওই কালো ড্রামের ভেতর ওরা করছে যে ছট্ ফট্।
নাম আমার আলীবাবা, বড়দিনের ভীড়
তাই রক্তে মাখা মাখি আমার সারাটা শরীর,
শীত যে আমার করছে না কো, নেই যে অবকাশ
আটতিরিশটা পাখি মানে ন টাকা পঞ্চাশ।
রাতের বেলায় ফিরে এসে চাচার পিঠ মালিশ
নেই যে আমার বিছানা, নেই যে বালিশ,
তবু ঘুম যে আমার চলে আসে ডিসেম্বর মাসে।
স্বপ্ন দেখি, ঘুড়ি ওড়াই টানা আকাশে,
কান্না আমার যাচ্ছে কমে, বাড়ছে যে সাহস
নাম যে আমার আলীবাবা, বয়স এখনো দশ।

হরিপদ

হরিপদ একজন সাদামাটা ছোটখাট লোক
আকাশ থেকে নেমে এলো এক রাত্রে বড় বড় বড় বড় গোল গোল চোখ

আত্মীয় নেই কোন বন্ধু বান্ধব মেস বাড়িতে তার বাস
দায়িত্ব নেই কোন ঝন্জাট নেই কোন, নেই তার কোন অভিলাষ
আছে, কলসি আছে, আছে ঘরের কোণে, আছে ঘামছা আছে,
আছে মার্বো সাবান, চশমার মাইনাস পাওয়ার আছে পরিপাটি একদম

আছে একা একা স্বপ্ন দেখার অভ্যেস তার, ধার করে পত্রিকা পড়া
আছে এইট বি বাসের এক কোণ তার জন্যে, সকালের অফিসের তাড়া
আছে ছোট বেলা থেকে, এক কালা জ্বর রোগ তাই তেল ঝাল নুন খাওয়া হয়না
শুধু সাদা সেদ্ধ ছিল যে বরাদ্দ যতইনা ইচ্ছে হোক

বিজ্ঞাপনের হাতছানি দেখেও না দেখে
ভিড় বাসে ভাঁজ ভাঙা শাড়ির পরশ ভুলে থেকে
শনিবার, শনিবার নড়বড়ে সিড়ি বেয়ে মেসটার ছাদে উঠে
আকাশের দিকে চেয়ে জলে ভরে যেত তার চোখ

হয়তোবা কোনদিন প্রার্থনা করেছিল সে
তাই ধুম করে হঠাৎ এক শনিবারে নেমে আসে
টিভির এন্টেনা বাঁচিয়ে আস্তে করে
পাতিলের ধার ঘেষে বনবন করে ঘুরে
নেমে এলো বড় বড় চোখ

ঘাবড়ে গিয়ে দাত কপাটি লেগে যায় ঘেমে যায় হরির নাকটা
কোন এক ম্যাগাজিনে দেখে ছিল এই ছবি অজানা উড়ন্ত কী একটা
ধুয়ে যায় হরিপদ সাদা সাদা আলোতে, বেঁজে উঠে ইসরাজ কত
হাত পা মন মাথা ঘামতে ঘামতে টনটন করে তার নখ

হঠাৎ কী মনে হলে খিল খিলিয়ে হেসে উঠে হরিপদ কেরানী
এতসব বড়বড় দেশমেশ ফেলে তোরা কলকাতাতেই এলি
নিশ্চয় পথ ভুল করে যে বেটারা পাবেনা যে কিছুই হেথায়
আস্তে আস্তে দুটো পাতি হরিপদ জলে ভরে যায় তার চোখ

বুঝতে পারেনি তারা কখনযে নেমে এসে
তুলে নিয়ে গেছে তাকে মেঘের ওপাড়ে কোন দেশে
কেউ কোনদিন তার খোঁজ করেনিকো আর
ছিলনাকো কেউ তার কোন খোঁজ করবার
কেউ করেনিকো কোন শোক

টিভি দেখনা

ভাবী আর মা গেছে সিনেমা, তুমি একা
ভয় যদি হয় আছে টিভিটাকে খুলে ভুলে থাকা
মা গেছে বলে ঐ টিভিটাকে খুলে তুমি রেখনা
আমি বলি কী একটা চালাকি করে দেখনা
জানলা দিয়ে ঐ আকাশটাকে দেখ, টিভি দেখনা

রান্না আছে ঢাকা, তবু কান্না চেপে রাখা যাচ্ছেনা
বাকিরা হোটেলা রুল, তোমার কপালে চুল খিদে পাচ্ছেনা
রেগে গিয়ে টিভি খুলে, জোর করে সব ভুলে তুমি থেকনা
দেখ ডাকছে তোমায় বন্ধুরা আকাশ থেকে টিভি দেখনা
দেখ ডাকছে তোমায় সব্বাই আকাশ থেকে টিভি দেখনা

মেঘ থেকে ভাল্লুক মনে হয় নাকি তুমি দেখনি
তোমার হাতের ছায়া দিয়ে দেয়ালে একটা হরিণ নিয়ে খেলনি
খাটটাকে মাঠ ভেবে একটু উপুর হয়ে থাকনা
দেখ ডাকছে তোমায় আকাশটা টিভি দেখনা
দেখ ডাকছে তোমায় জানলা বাইরেটা টিভি দেখনা


ভাবী আর মা গেছে সিনেমা, তুমি একা
ভয় যদি হয় আছে টিভিটাকে খুলে ভুলে থাকা
মা গেছে বলে ঐ টিভিটাকে খুলে তুমি রেখনা
আমি বলি কী একটা চালাকি করে দেখনা
জানলার বাইরে আকাশটাকে দেখ, টিভি দেখনা

শুনতে কি চাও

শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বে-সুরো সুর
ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর
দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওয়ালাটাকে
তার খেলনা দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে,
স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা
সেই অদ্ভুত ফাটা বাঁশ আর মাটির সুর টানা টানা
দু’দিনের সম্পদ দু’টাকার বাজনার বিষ্ময়;
তারপর কখন হঠাৎ সুখের মানে পাল্টে যায়
তারপর টিফিনের পয়সা দিয়ে সিগারেট
কলেজ কেটে সিনেমা বান্ধবীর সাথে কাটলেট
আসে দশটা পাঁচটা সেই একরুটের বাসটা তারপর
সবার মতই পড়তে হয় যে কাগজের টোপর।


এখন মাসের শেষে মাঝে মধ্যে কান্না পায়
মিনিবাসে দাড়িয়ে অফিস যাবার সময়
এখন বুঝেছি সেই অদ্ভুত সুরের কি মানে
ফিরে তো যাওয়া যায় না যে আর সেখানে;
যেতে হবে যে তোমাকে আমাকে চলে
লুকোনো টেক্কা সংসারের এক্কা দোক্কা ফেলে
প্রথমে যাবে ঘর-দোর দোকানপাট তারপর হৃদয়
কিছুই হলো না বাজানো গেল না সময়
ইদানিং সে সুরটা শুনতে যে খুব ইচ্ছে হয়
কিন্তু সেই খেলনাওয়ালা আর আসেনা পাড়ায়
হয়তো কোন অন্য অলি-গলি ঘুরে
অন্য কোন কাউকে টানছে সেই অদ্ভুত সুরে।

রঞ্জনা

পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবো
বলেছে পাড়ার দাদারা
অন্য পাড়া দিয়ে যাচ্ছি তাই
রঞ্জনা আমি আর আসব না 

ধর্ম আমার আমি নিজে বেছে নিই নি
পদবীতে ছিল না যে হাত
মসজিদে যেতে হয় তাই জোর করে যাই বছরে দু একবার  
বাংলায় সত্তুর পাই আমি এক্সামে
ভালো লাগে খেতে ভাত মাছ
গাজা সিগারেট আমি কোনোটাই ছুই না
পারি না চড়তে কোনো গাছ
চশমাটা খসে গেলে মুশকিলে পড়ি
দাদা আমি এখনও যে ইশকুলে পড়ি
কব্জির জোরে আমি পারবোনা।
পারবোনা হতে আমি রোমিও
তাই দুপুর বেলাতে ঘুমিও
আসতে হবে না আর বারান্দায়
রঞ্জনা আমি আর আসবোনা 

বুঝবো কি করে আমি তোমার ঐ মেঝ দাদা
শুধু যে তোমার দাদা নয় 
আরো কত দাদাগিরি, কব্জির কারিগরি
করে তার দিন কেটে যায় 
তাও যদি বলতাম হিন্দুর ছেলে আমি
নীলু বিলু কিম্বা নিতাই
মিথ্যে কথা আমি বলতে যে পারি না
ভ্যাবভ্যাবাভ্যাবাচ্যাকা খাই।
চশমাটা খসে গেলে মুশকিলে পড়ি
দাদা আমি এখনও যে ইশকুলে পড়ি
কব্জির জোরে আমি পারবোনা
পারবোনা হতে আমি রোমিও
তাই দুপুর বেলাতে ঘুমিও
আসতে হবে না আর বারান্দায়
রঞ্জনা আমি আর আসবোনা 

সত্যিকারের প্রেম জানিনাতো কি সেটা
জাচ্ছে জমে হোম টাস্ক
লাগছেনা ভালো আর মেট্রো চ্যানেলটা
কান্না পাচ্ছে সারারাত 
হিন্দু কি জাপানী জানিনা তো তুমি কি
জানে ঐ দাদাদের গ্যাং
সাইকেলটা আমি ছেড়ে দিতে রাজি আছি
পারবোনা ছাড়তে এ ঠ্যাং
চশমাটা খসে গেলে মুশকিলে পড়ি
দাদা আমি এখনও যে ইশকুলে পড়ি
কব্জির জোরে আমি পারবোনা
পারবোনা হতে আমি রোমিও
তাই দুপুর বেলাতে ঘুমিও
আসতে হবে না আর বারান্দায়
রঞ্জনা আমি আর আসবোনা